
Title | : | অন্যজীবন |
Author | : | |
Rating | : | |
ISBN | : | - |
ISBN-10 | : | 9789845980487 |
Language | : | Bengali |
Format Type | : | Hardcover |
Number of Pages | : | 150 |
Publication | : | Published February 1, 2012 |
অন্যজীবন Reviews
-
চমৎকার লেখনী এবং জবানীতে আত্মজীবনী টি লেখা । ১৯৩০-৪০ এর দশকে বাংলার গ্রাম এবং মুসলিম সমাজে সামাজিক জীবন প্রণালি , পারিবারিক জীবনযাত্রা , নারীর অবস্থান - লেখকের শৈশব , কৈশোর, বয়ঃসন্ধিকাল ও কিশোরী তরুণী জীবনের বহুবিধ খুঁটিনাটিতে ফুটে উঠেছে । teenage এ তাঁর বয়স কালীন সাধারণত্ব , অসাধারণত্ব দিকগুলির চমৎকার একটি ছবি লেখায় ফুটে উঠেছে । লেখক যেন একটি লেন্সের মধ্যে দিয়ে তাঁর শৈশব কালীন জুরু'র জীবনে ফোকাস করলেন । আবার বিভিন্ন কাছের মানুষের সংস্পর্শে কৈশোর কালীন তাঁর মধ্যে যে নিজের একটা প্রদীপ্ত প্রভা ফুটে উঠল , বই পড়ার দুর্দমনীয় ইচ্ছার যে প্রগলভতা , যেমনটা আমরাও করে থাকতাম লুকিয়ে ছোটবেলায় পড়ার বাইরের বই পড়বার জন্যে , আর কিশোরী তরুণী বয়সে তাঁর প্রণয়ের যে স্নিগ্ধ কোমল রূপটি - পড়ে মন কে একটা আনন্দ , পরিতৃপ্তি দেয় ।
একই সময়ে Virginia Woolf এর A Room of One's Own পড়ছি , যেখানে পাশ্চাত্যে ষোড়শ, অষ্টাদশ এবং বিংশ শতাব্দীতে প্রাক যুদ্ধ সময়ে নারীর অবস্থানহীন অবস্থার একটা ছবি দেখানো হয়েছে । একে তো অধিকারহীনতা বহুকালের , তার উপর সীমিত সুযোগের মধ্যেও যে অপ্রতুলতা । প্রায় প্রাক ২য় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলার সমাজে নারীদেরও প্রায় তদনুরূপ জীবনযাত্রার আরেকটি সমরেখাচিত্র ছিল "অন্যজীবন" লেখাটি । -
জুড়ু!নাম দেখেই কপালটা কুঁচকে গেছিলো তার উপর গ্ৰাম্য ভাষা,নাহ বইটা বোধহয় পড়ে উঠতে পারব না! কিন্তু মানুষ যা ভাবে তাই কি হয় সবসময়?অনাগ্ৰহে দুই তিন পাতা পড়ার পর হঠাৎ করে রূপকথার রাজকন্যা যেমন জাদুর কাঠির পরশে তার ঘুম থেকে জেগে উঠে তেমনিই জাহানারা ইমাম এক অঘোষিত এবং আকস্মিক আকর্ষনে টেনে নিয়ে গেলেন উনিশশো শতকের শুরুর দিকে, যেখানে কন্যা মাত্র সন্তান জন্মদান আর ঘর সংসার সামালানোর একটা মাধ্যম,বাঙ্গালা শেখা মানেই বেশরীয়তী কাজ!আর মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনা করানো?সেটা তো সৈয়দ বংশের জন্য রীতিমতো লজ্জার ব্যাপার।
ছোটো বেলায় জুড়ুর জগত জুড়ে তার নানী আর পরবর্তী সময়ে মা এ দুজনের সান্নিধ্যে শৈশব ছিল দুরন্ত স্বপ্নচারী ঘুড়ির মতো, আমার নিজের নানী আমার প্রথম হাতে খড়ি দেন, তিনবছর থেকে আটবছর বয়স অবধি মামা বাড়ি মজার ভারী এ আনন্দ উপভোগ করেছি ভরপুর তাই জুড়ুর নানীর কথা শুনতে শুনতে নিজের সামনে নানুর সেই আদুরে চেহারাটা ভেসে উঠলো যদিও লোকে বলে আমি একদম চেহারা স্বভাবে আমার নানীর প্রতিবিম্ব! আমার নানীর কাছে আমার অবাধ স্বাধীনতা আহা জাহানারা ইমাম ধন্যবাদ আমার শৈশবকে আরো একবার মনে করিয়ে দিতে ।😊
নিজের এইরকম রক্ষণশীল পরিবারের মাঝে আর দশটা মেয়ের মতোই জুড়ুর ভবিষ্যত হয়ত ওই চুলোয় বসেই কাটত, কিন্তু উদার পিতা-মাতা সৌভাগ্য লাভ হয়েছিল তার, পড়াশোনা থেকে শুরু করে কল্পনার জগতকে রাঙ্গিয়ে বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত হতে চাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়!
যেখানে বিয়ের আগে অবরুদ্ধ রাখা হত যেন আব্রু রক্ষা হয় সেখানে বইয়ের মলাটে "jahan I'm in love with you"একথা লেখাটা সেযুগে সমুদ্রের তীরে বালি দিয়ে লিখে আশা করা যে তা কোনো ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে না এবং সেই অনুভূতিটা মনে ধারন করে বিয়ের পরিনতিতে নিয়ে যাওয়া সতি্যই দুঃসাহসিক কাজ,হয়ত মনের টানটা যখন গভীর হয়, অনুভূতি গুলো শুদ্ধ থাকে,চাওয়াটা নিষ্পাপ আর অকৃত্রিম হয় তখন দুনিয়ার সমস্ত ঝড়ই এক পশলা বৃষ্টির মতো শান্তি নিয়ে আসে.😃
স্মৃতির পাতায় আরেকটি রঙ্গিন শৈশবের গল্প জুড়ে গেল সারাজীবনের জন্য!এ মন খারাপের সময়ে এটাই বা কম কি! -
আমি সবাইকে খুব সখ করে জুড়ুর গল্প বলি। ছোট্ট জুড়ু বই পড়তে ভীষণ ভালবাসতো! লুকিয়ে লুকিয়ে প্রচুর বই পড়তোও। শুধু পড়ার বই তার ভাল লাগত না। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠার সময় সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কিছুতেই আর স্কুলের পড়া পড়বেনা। তখন "মটকা চাচা" তাকে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের গল্প শোনায়। গল্প শুনে আর পত্রিকায় বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতের ছবি দেখে জুড়ুর বুকের ভেতরটা উলট পালট হয়ে যায়। মাথা তুলে খুব গর্বিত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে "আব্বাজান, আমি বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতের মত লেখাপড়া শিখব!" এই শেখার ইচ্ছেটা মনের মধ্যে জাগিয়ে রাখার জন্য পড়ার টেবিলের সামনে চারকোণা পিজবোর্ডে সাদা কাগজ আঠা দিয়ে সেঁটে বড় বড় করে লিখল- "প্রতিজ্ঞা করেছ যখন রাখিতে হইবে তখন" আর "মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন"।
এই ছোট্ট জুড়ুই জাহানারা ইমাম, শহীদ জননী।
অন্যরকম একটা আত্মজীবনী "অন্যজীবন"। কুসংস্কারে বিশ্বাসী একটি মেয়ে কিভাবে রাতারাতি বদলে যায় সেই গল্প জেনে অনেক সময়ভর মুগ্ধ হয়ে থেকেছি। কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি যুগের লজ্জা লজ্জা পবিত্র প্রেম অতঃপর বিবাহ, আম্মার রাজনৈতিক মতাদর্শ সবকিছু মিলিয়ে আসাধারণ একটা বই! -
বইমেলাতে প্রথম হাতে নিয়ে যখন বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠাতে আঞ্চলিক ভাষায় লেখায় কয়েকটা লাইন পড়লাম- তখনও বুঝি নাই যে এটা জাহানারা ইমামের নিজের জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা।
অন্যজীবন বইটি বলতে গেলে একই সাথে একটি উপন্যাস আবার গতানুগতিক ধারার বাইরের এক আত্মজীবনী৷ এ বইতে লেখিকা জাহানারা ইমাম তার সোনালি শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে যৌবন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার এক স্মৃতিচারণ করে গেছেন।
এক কথায় বলতে গেলে "অন্যজীবন" অদ্ভুত সুন্দর একটি বই। বইয়ের প্রথমে পড়ে মনে হবে কোনো উপন্যাস যার প্রধান চরিত্র 'জুড়ু' নামের এক ছোট্ট মেয়ে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার দেখা যাবে লেখিকা জুড়ুর পরিবর্তে 'আমি' ব্যবহার করে জানিয়ে দিচ্ছেন যে জুড়ু মেয়েটি আর কেউ না বরং লেখিকা নিজেই।
বইটি পড়তে পড়তে লেখিকার মত আমি নিজেও বহুবার নিজের অতীতের স্মৃতি ভেবে নস্টালজিক হয়েছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায়, আমাদের সবার জীবনেই নেমে আসে বহু পরাধীনতার শিকল; আমাদের মত লেখিকার জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়।
বর্তমানে আমরা সবাই ই চাই যদি একবার হলেও নিজের সেই সোনালি শৈশবের দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া যায়! কিন্তু সে কি আর সম্ভব? হয়তো লেখিকাও ফিরে যেতে চেয়েছিলেন নিজের সেই চমৎকার দিনগুলোতে। যা বহিঃপ্রকাশ এ 'অন্যজীবন' বইটি... -
জাহানারা ইমামের লেখনী র ভক্ত আমি আগে থেকেই, ব্যক্তি জাহানারা ইমামের তো অবশ্যই। উনাকে নিবিড়ভাবে জানার মাধ্যম এই বই তাই আমাকে অন্যরকম আনন্দ দিয়েছিলো পড়ার সময়। উপহার দেওয়ার জন্য এই বই অনেক খুঁজেছি, পাইনি বইয়ের দোকানে।
শুধু শুরু করেও শেষ করতে পারিনি উনার যে বইটি তা হলো 'ক্যান্সারের সাথে বসবাস'। ভীষণ ভালোবাসা লেখিকার জন্য। -
অসম্ভব ভালো লাগার মত একটি বই। শহীদ জননীর যে কয়টি বই পড়েছি, তার মধ্যে কোনো একটা অদ্ভুত কারণে এই বইটা সবচেয়ে বেশী ভালো ল���গেছে। পাঁচ তারার বেশী দেয়ার সুযোগ থাকলে তাই দিতাম।
যদিও বই এর প্রথম দিকে একটু কম ভালো লাগছিল। কিন্তু যতই এগুতে লাগলাম, আস্তে-আস্তে ভালো লাগাটা যেন বাড়তে থাকল। -
মহীয়সী জাহানারা ইমাম ম্যামের শৈশব, কৈশোরে কালের ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বইটার পরে একাত্তুরে দিন গুলো পড়লে, জাহানারা ম্যামের জীবনের অনেকটা জানতে পারবে পাঠাক। -
গল্পের বই পড়ার প্রতি জুড়ুর ছিল প্রবল আগ্রহ। কিন্তু এই বয়সে গল্পের বই কিংবা নভেলে হাত দেয়া বারণ। কিন্তু জুড়ু কি বারণ মানার মত মানুষ! তাঁর বাবার বঙ্কিম রচনাবলী লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া শুরু করলো, কিন্তু লুকিয়ে পড়লেও মাঝেমধ্যে লুকানোর জায়গা থেকে বেরিয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাওয়া লাগে। জুড়ু যেটা করতে ভুলে গিয়েছিল। কাজেই পুরো বাড়িতে জুড়ুকে খোঁজার শোরগোল পড়ে গেলো। পরে যখন সে নিজেই বেরিয়ে এলো তখন আর যায় কোথায়! মা ফুসতে ফুসতে বললেন, 'দাঁড়া, তুর আব্বা আসুক।' এই কথার পরে তোর আর বইয়ে হাত দেয়া যায় না! কিন্তু জুড়ু দিলো! গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে বই হারিকেন নিয়ে চলে গেলো চৌকির নিচে, ধুলো ময়লায় মাখামাখি হয়ে সারারাত ধরে পড়া চললো!
অথচ এই জুড়ুই এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আর পড়াশোনা করবে না। মা বাবা শত বকেও বুঝাতে পারেনি যাকে সে-ই কিনা পরবর্তীতে পড়াশোনা চালিয়ে গেলো কৃতিত্বের সঙ্গে এবং পরিণত হলো জাহানারা ইমামে।
'অন্যজীবন' বইটা মূলত জাহানারা ইমামের আত্মজীবনীমূলক বই। যদিও শুরুটা হয়েছে নামপুরুষে- জুড়ুর মাধ্যমে। সেটা ধীরে ধীরে উত্তম পুরুষে রূপান্তরিত হয়েছে। জাহানারা ইমামরা থাকতো বাবার সাথে, মাঝেমধ্যে গ্রামে যেতো দাদাবাড়িতে। সেই সময়টা স্মরণীয় হয়ে থাকতো। পুরো গ্রাম দাপিয়ে বেড়াতো। এই বর্ণনায় সেই চিরচেনা গ্রামের বেশ কিছু দিক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি তাঁর বাবার চাকরির সুবাদে শহরে থাকাকালীন সময়টার কথাও বর্ণনায় এসেছে।
খুব সুন্দর ভাষায় লেখা এগিয়েছে। মাঝেমধ্যে কাহিনির খাতিরে কথ্যভাষায় সংলাপ এসেছে যা লেখাটাকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। লেখিকা নিজেই বলেছেন যে '৮৫-র ঢাকায় বসে যখন তিনি জীবনের প্রথম দশকের দিকে তাকান তখন বিশ্বাসই হতে চায় না যে সেই সময়ের ব্যক্তি আর লেখিকা একই ব্যক্তি! কাজেই বইয়ের নাম অন্যজীবন হওয়াটা স্বার্থক।
বই: অন্যজীবন
লেখিকা: জাহানারা ইমাম
চারুলিপি প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫
মূল্য: ২২৫ টাকা মাত্র
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১১২
রিভিউ: ৭ এপ্রিল, ২০২১। ফেসবুক গ্রুপ। -
কি অসম্ভব সুন্দর একটা বই!
-
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শৈশব- কৈশোরের এই স্মৃতিচারণ সুখপাঠ্য । সেকালের সমাজচিত্রও খানিকটা ফুটে এসেছে। বইটিতে উঠে আসা আঞ্চলিক বাংলাও বেশ চিত্তাকর্ষক ।
-
জাহানারা ইমামের আত্মজীবনী-মূলক উপন্যাস হচ্ছেএই অন্য জীবন , যেখানে তার ছোট বেলার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখিকার ডাকনাম ছিল জুড়ু। মা বাবার ইচ্ছে, সমর্থন আর সহযোগিতায় তিনি পড়াশোনা নিয়ে এত দূর এগিয়েছেন। তার সাথে ছিল নিজের ইচ্ছেশক্তি ।লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তে গিয়ে যা সব কান্ড করেছেন, পড়লেই হেসে কুটি কুটি হতে হয়।
অসম্ভব সুন্দর লেখনীর বই এই অন্য জীবন। মন ভালো করে দেয়ার মতো একটা পজিটিভ ভাইব আছে বইটায়।