
Title | : | কমলাকান্তের দপ্তর |
Author | : | |
Rating | : | |
ISBN | : | - |
ISBN-10 | : | 9844150434 |
Language | : | Bengali |
Format Type | : | Hardcover |
Number of Pages | : | 68 |
Publication | : | First published January 1, 1875 |
কমলাকান্তের দপ্তর Reviews
-
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’।ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে চাকরির দরুন সরাসরি কিছু বলতে না পারলেও মনের অব্যক্ত কথা তিনি প্রকাশ করেছেন তার রচনায়।তার নথি পাঠে ঘুমের উদ্বেগ ঘটে, অনিদ্রায় থাকা মানুষদের কিছুটা সুবিধে হবে ভেবে নিজের নথি গুলো প্রকাশ করেন বঙ্কিমচন্দ্র।
কমলাকান্তকে পাগল বলিয়া সবাই চিনিতো।কখন কি বলিতো, কি করিতো তার ঠিক ছিলো না।লেখাপড়া কিছু জানিতো বটে কিন্তু সে লেখাপড়ায় অর্থোপার্জন হইল না।কোন মতে সার্টিফিকেট বাহির করিয়া বিদ্যান বনে যাওয়ারা সমাজের পতি হইয়া উঠে,কিন্তু কমলাকান্তের মতো হাজার পুস্তক পাঠ করা মানুষ সমাজের চোখে গন্ডমুর্খ রয়ে যায়।কমলাকান্ত সেই সমাজকে প্রশ্ন করেছেন।তার সেই হাজার প্রশ্ন আর ভাবনার সংকলন কমলাকান্তের দপ্তর।
বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত তিন খন্ডে রচিত।প্রথম খন্ড হলো "কমলাকান্তের দপ্তর"। এখানে ১৪ টি সংখ্যা ১৪ টি শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
১.একা কে গায় ওই:- অর্জন এবং ক্ষতি উভই সংসারের নিয়ম।তুমি যত অর্জন করিবে,তত চাওয়া বাড়িবে।কিন্তু বুড়ো বয়সে সুন্দরকে আর দেখিতে পাওয়া যায় না।অথ্যাৎ মানুষ্যজাতির উপর প্রীতি থাকিলে, অন্য সুখ লাগে না।
২.মনুষ্যফল:- মানুষ্যসকল সংসার বৃক্ষে এক ফল বিশেষ।পাকিয়া পড়ার অপেক্ষায় সবাই।কতক অকালে পাকিয়া পড়ে,কতক শুকাইয়া ঝড়িয়া পড়ে।যেটি সুপক্ক সেটি গঙ্গা জলে ধৌত হয়ে দেবসেবায় লাগে।অথ্যাৎ জন্ম সার্থক।
৩.উদর দর্শন:- ইউরোপ অক্ষয় কীর্ত্তি স্থাপন করিয়াছে।বঙ্গ দেশের মানুষ চাষ করিয়া চাষা হইয়াছে।তোমরা কি খাও পাষণ্ড,চাষেতে কি পাপ আছে?
৪.পতঙ্গ:- পিতলের প্রদীপের উপর আগুন জ্বলিলে কোন পতঙ্গ তাহার চারিদিকে ঘুরপাক খাইতো।কিন্তু এখন কি সব যন্ত্র আসিয়াছে যে তাহার উপর পড়িলে আর রক্ষা নেই।বঙ্গ দেশের মানুষের বর্তমান অবস্থাও সেইরূপ।
৫.আমার মন: আমার মন কোথাই গেল?কে লইল?কে চুরি করিলো? সাত সমুদ্র খুঁজিয়াও মনচরকে পাইলাম না।বন্ধুু আমার মনের ঠিকানা সন্ধান করিতেছে।
৬.চন্দ্রোলোকে: সুজলা সুফলা, নদীবিধৌত আমাদের এই দেশ।এই তো আমাদের চন্দ্রদেশ।ইহাকে খোঁজ করিতে কত না বিচরণ।
৭.বসন্তের কোকিল:যখন দক্ষিণা বাতাস বহে,বসন্তের ফুল ফুটে তখন তুমি এসে রসিকতা করো।যখন শীতের রুক্ষতা,কম্পনে থরথর জীবলোক তখন হদিস মিলে না।তুমি যে বসন্তের কোকিল গো।
৮.স্ত্রী লোকের রূপ: যখন সাজিয়া গুজিয়া রুপের ঝটা ছড়ায়া চলিবা তখন মাটিতে পা পড়িবে না।রুপের বান ডাকিয়া পুরুষ কুলের মহিত করিতে জুড়ি রাখিবা না।কিন্তু ললনা তোমার মিছা রুপের বড়াইয়ের কাজ কি?
৯.ফুলের বিবাহ: ফুলের বিবহ হইবে।নতুন ফুল আসিবে।সেই তুমি বিহাহ অনুষ্ঠানে মালা হইয়া শোভিত হইবে।ওঃ পোড়া কপাল গো ফুলের।
১০.বড় বাজার: মাছ বাজার,রুপের বাজার,হরেক রকম বাজার ঘুরে বিদ্যের বাজারে এসে উপস্থিত হইলাম।এখানে দেখি কর্তাগো দাম দিয়ে কিনতে হয় না।
১১.আমার দুর্গোৎসব: মা একা একা রোধন করিতেছেন।আমি ডাকিতেছি বঙ্গজননী।মা উঠিলেন না।উঠিবেন না কি?
১২.একটি গীত: "এসো এসো বঁধু এসো"।
কিসে সুখ আছে?নষ্ট সৃতি জাগরিত হইলো সুখের ভাবাবেগ হয়।অতঃপর দেশলক্ষী ডুবিলেন , সুখ নিয়া ডুব দিলেন।
১৩.বিড়াল: বিড়ালের কন্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত,নিষ্পষিত,দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্ত্বিক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে।বিড়াল একটি পতিত আত্মা।যার দ্বারা মানুষের আত্মাকে স্বর্��� গামী করার অপচেষ্টা কমলাকান্তের চলতে থাকে।
১৪.টেঁকি: যদি পৃথিবীতে টেঁকি না থাকিত তবে খাইতাম কি?পাখির মতো উড়িয়া ঘুরিয়া বেড়াইতাম।টেঁকির বিনিময়ে খাদ্য, ইহার এই মহাত্ব আমাকে বড়ই নাড়া দেই।
এরপর "কমলাকান্তের পত্র" এটি পাঁচ টি শিরোনামে রচিত।
কি লিখিব,পলিটিকস,বাঙালির, মনুষ্যত্ব,বুড়ো বয়সের কথা, কমলাকান্তের বিদায়।
তিন নাম্বার টি হলো "কমলাকান্তের জবানবন্দী।"
পরিশিষ্ট- কাকাতুয়া
কমলাকান্ত খুব লেখালিখি করত। একটু কাগজ পেলেই লিখত।বিলের কাগজে ছবি আঁকত।সরকারি নথিতে কবিতা লিখতো।ছদ্ম নাম হিসেবে তিনি কমলাকান্ত নামটা পছন্দ করেন।এই পাগল কমলাকান্তকে ভালোবাসতেন এক প্রকাশক।কমলাকান্তের মৃত্যুর পর কমলাকান্ত নামে নথিগুলো গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করতে থাকেন সেই প্রকাশক।ঐ সব গ্রন্থ পাঠকের মনের খোরাক মোটায়। -
আমি শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসিয়া, হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিলাম। একটু মিট মিট করিয়া ক্ষুদ্র আলো জ্বলিতেছে—দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়া, প্রেতবৎ নাচিতেছে। আহার প্রস্তুত হয় নাই—এজন্য হুঁকা হাতে, নিমীলিতলোচনে আমি ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম, তবে ওয়াটালু জিতিতে পারিতাম কি না। এমত সময়ে একটি ক্ষুদ্র শব্দ হইল, “মেও!”-⠀
⠀
এভাবেই শুরু হয় 'কমলাকান্তের দপ্তর' বইটির ত্রয়োদশ সংখ্যা 'বিড়াল', যা আমার উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বইয়ে অন্তর্ভূক্ত। এই প্রবন্ধটা পড়ে বেশ ভালোই লেগেছিল, যার কারণে বইটা কিনে ফেলা। তাছাড়া আফিমখোর কমলাকান্তের জন্য একটু মায়াও লাগছিল।⠀
⠀
আফিমের নেশায় থাকলে কী হবে, কমলাকান্ত কিন্তু সব সত্যিই বলতো। এই আফিমখোর কমলাকান্তকে দিয়ে লেখক সমাজের প্রচলিত অনেক অসঙ্গতি, কুপ্রথার সাহিত্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে চাকরির কারণে সরাসরি কিছু বলতে পারেননি তিনি। কিন্তু ব্রিটিশদের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে মনের অব্যক্ত কথা তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর রচনায়। আমাদের কমলাকান্তের কিন্তু খুব বিদ্যে। একসময় সে কেরানিগিরিও করতো, কিন্তু আপিসের কাজ মেটানোর বদলে সে বসে বসে সেক্সপিয়র সাহেবের লেখা গিলতো দেখে চাকরিটা তার আর করা হয়নি। এ কারণে অবশ্য অনেকে তাকে পাগল বলে। আনমনে নিজের সাথে কথা বলে, অন্যের সাথে হেঁয়ালি করে, লেখাপড়া জানা মানুষ- এত বিদ্যা থাকতে ও তার চাকরী নেই। কমলাকান্তের জবানবন্দীতে একটি এবং পরিশিষ্টে একটি সর্বমোট বিশটি বিভিন্ন বৈচিত্রের প্রবন্ধ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্ত নামক এই আফিমখোরের চরিত্র দিয়ে তুলে এনেছেন সমাজের সমস্যা, অন্ধবিশ্বাস, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক উন্নয়ন ও সেই সময়কার চিন্তাধারা, যেগুলো তিনি ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের শব্দগুলো অবশ্য একটু কঠিন, পড়তে যেয়ে আপনার দাঁতও ভেঙ্গে যেতে পারে।⠀ -
কমলাকান্তের দপ্তর বইটি খুবই সুন্দর কমলাকান্ত চরিত্রটি… আফিমের নেশায় উন্মাদ একটি মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়েও যে ভূল কথা বলে না তার জলন্ত প্রমান কমলাকান্ত, হুঁকা খাওয়া তার প্রতিনিয়ত অভ্যাস তবুও তিনি ভূল কথা বলতেন না।
সমাজের অযাচার, কৃপ্রথা বলেন আর কিছুনা সকল কিছু কিন্তু তিনি ওই আদি অবস্থান থেকে লিখে গেছেন।
"দাসত্বের সুখ নিহিত থাকে প্রভুর মহাত্ন গাহনে।"
"বিবাহ-রাত্রিতে নববধূকে অধিক উপদেশ প্রদ��ন করিতে গেলে ধৰ্ম্মযাজকতার ভান হয়।"
"তুমি বসন্তের কোকিল, শীত বর্ষার কেহ নও ।"
"গলাবাজিতে সংসার শাসিত হয় বটে, কিন্তু কেবল চেঁচাইলে হয় না ।"
"কার্য - কারণ সম্বন্ধ বড় গুরুতর কথা ; টাকা দাও এখনই একটা কাৰ্য্য হইবে, কম দিলেই অকাৰ্য্য ;"
"এই সংসার সমুদ্রে আমি ভাসমান তৃণ, সংসার বাত্যায় আমি ঘূর্ণায়মান ধূলিকণা, সংসারারণ্যে আমি নিষ্ফল বৃক্ষ, সংসারাকাশে আমি বারিশূণ্য মেঘ—-"
"পুরুষ ভূষণ বিনা সন্তুষ্ট থাকে ; স্ত্রীলোক ভূষণ বিনা মনুষ্য সমাজে মুখ দেখাইতে লজ্জা পায় ৷" -
আমি বলি রমণী হচ্ছে নারিকেল। নারিকেল কাঁদি কাঁদি বলে বটে তবে কেও কাঁদি কাঁদি পাড়ে না। নারিকেলের জল আর নারী স্নেহের সদৃশ্য দেখি।
অনেকগুলি গল্পের মধ্যে কিছু গল্প অতিরঞ্জিত আর কিছু গল্প অতিনীতিবাক্যময়।তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে "মনুষ্য ফল" গল্পটি।
লেখকের উঁচু মানের লিখনি সম্মন্ধে কথা বলার মতো মস্তিষ্ক আমার তৈরী হয়নি। তবে বলিতে পারি,
জগতের সকল প্রয়োজনীয় বস্তু আমাদের মস্তিষ্কবধের মূল।
"জগৎটা একটি বিশাল বাজার_সকলেই সেখানে আপনাপন দোকান সাজাইয়া বসিয়া আছে। সকলের উদ্দেশ্য মুল্যপ্রাপ্তি।"
মানুষ নেশাগ্রস্ত হলে যে ভূল কথা বলেনা তা র জলন্ত প্রমান কমলাকান্ত, হুঁকা খাওয়া তার প্রতিনিয়ত অভ্যাস তবুও তিনি ভূল কথা বলতেন না।
সমাজের অযাচার, কূপ্রথা বলেন আর কিছুনা সকল কিছু কিন্তু তিনি ওই আদি অবস্থান থেকে লিখে গেছেন।
"দাসত্বের সুখ নিহিত থাকে প্রভুর মহাত্ন গাহনে।"
বি.দ্রঃ বইয়ের ভাষাগত দিকের কারনে আপনার কয়েকটি দাঁত শহিদ হতে পারে। -
আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক তাকে বলা যেতেই পারে। অন্তত এই বইটা পড়লে বুঝা যায় উনার সাহিত্য প্রতিভা। কমলাকান্ত নামক একজন আফিমখোর এর চরিত্র দিয়ে তিনি তুলে এনেছেন সমাজের সমস্যা, অন্ধবিশ্বাস, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক উন্নয়ন ও সেই সময়কার চিন্তাধারা, যেগুলো তিনি ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইটা পড়ে দাঁত ভাঙতে পারে, অনেক কঠিন শব্দ ও বাক্য সংবলিত :-P
-
কমলাকান্তের জবানবন্দী ছাড়া বাকি সব পড়তে দাঁত ভেঙ্গে পড়ার জোগাড় হইছে। কী বলবো - গল্পগুলোর সারবস্তু চমৎকার। রূপকগুলো অসাধারণ। শুধু ভাষাটাই সমস্যা। তিনি আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক হতে পারেন, কিন্তু তার গদ্য পড়লে বাংলা বই পড়ার ইচ্ছা চিরতরে বিদায় নিবে, এইটা মোটামুটি নিশ্চিত। :P
-
বইঃ কমলাকান্তের দপ্তর
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধরনঃ প্রবন্ধ
পেজঃ ৮৭
মূল্যঃ ১০০ টাকা
প্রথমে আসি প্রবন্ধ কি? আমরা প্রবন্ধ বলতে বুঝি কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিমুলক গদ্যরীতির সাহিত্যসৃষ্টিকে। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে প্রবন্ধ হচ্��ে প্রকৃষ্ট বন্ধনযুক্ত রচনা। এককথায় বিষয়বস্তুর সুষ্ঠ সমন্বয়যুক্ত ধারাবাহিক পরস্পর্য সহযোগে আলোচনাই হচ্ছে প্রবন্ধ। প্রবন্ধ লেখার পরিসীমা বিস্তৃত।
বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কমলাকান্তের দপ্তর একটি প্রবন্ধ সংকলন। এতে প্রথম সংখ্যা - একায় রয়েছে চৌদ্দটি প্রবন্ধ। কমলাকান্তের পত্র বিভাগে রয়েছে পাঁচটি প্রবন্ধ।
কমলাকান্তের জবানবন্দীতে একটি এবং পরিশিষ্টে একটি সর্বমোট বিশটি বিভিন্ন বৈচিত্রের প্রবন্ধ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র মূলত উপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হলেও প্রবন্ধ সাহিত্যে একটি বিরাট প্রতিভা নিয়ে আর্বিভূত হন। লেখকের প্রথম প্রবন্ধ "লোকরহস্য"। তার পরবর্তী প্রবন্ধগ্রন্থ " কমলাকান্তের দপ্তর"। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৫ সালে।
"কমলাকান্তের দপ্তর" শ্রেষ্ঠ ব্যাঙ্গারসাত্মক রচনাগুলোর মধ্যো অন্যতম। এ গ্রন্থের প্রবন্ধগুলোতে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের প্রভাবশালী কপটদের ব্যাপারে সোজাসুজি কথা না বলে অর্ধোন্নমাদ নেশাখোর কমলাকান্তের শরনাপন্ন হয়ে কথা বলেছেন।
এ প্রবন্ধের প্রধার চরিত্র কমলাকান্ত। সে কিন্তু কোন বাস্তব চরিত্র নয়। সে এক কাল্পনিক আপিমখোর। অনেকে তাকে পাগল বলে। তার কথা বলার ভারসাম্যতা নেই, লেখাপড়া জানা মানুষ, ইংরেজী ও সংস্কৃতিতে কথা বলতে পারে। এত বিদ্যা থাকতে ও তার চাকরী নেই। কোন অর্থোপার্জন নেই। কত বড় মূর্খ কেবল নাম দস্তখত করতে পারে তাদের অর্থের অভাব নেই, তারা বড় বড় তালুক-মুলুকের মালিক।
কমলাকান্তের একবার চাকরী হয়েছিল।
ইংরেজী বলতে পারে বলে এক ইংরেজ সাহেব তাকে অফিসের কেরানীগিরির চাকরী দিয়েছিলেন। কিন্তু সে চাকরী বেশী দিন স্থায়ী হয় নি। কেন হয়নি? তা গ্রন্থটি পড়লে বুঝতে পারবেন।
চাকরী চলে গেলেও তার কোন অসুবিধা নেই। এজন্য সে বিয়ে করে নি। তার অর্থের কোন প্রয়োজন নেই। সে ভ্রমন প্রিয়, যেখানেই যায় সেখানেই কিছু খাবার জুটে যায়। তবে একস্থানে সে বেশী দিন থাকে না। কেউ তাকে যত্ন করে পাগল বলে।
"কমলাকান্তের দপ্তর" গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধটি হচ্চে "কে গায় ওই" প্রবন্ধটির মূলভাব হচ্ছে সাংসারিক জীবনপ্রবাহ। এখানে তিনি সাংসারিক জীবনের গতি প্রকৃতি ও ভাল মন্দের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ প্রবন্ধে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন- যৌবনে সংসারকে যেভাবে দেখা যায় কিংবা উপভোগ করা যায় বার্ধক্য এসে সেভাবে দেখাও যায় না এবং উপভোগও করা যায় না। যৌবনে সংসার নিয়ে যে কল্পনা থাকে, প্রত্যাশা থাকে বার্ধক্যে এসে এর সব মুছে গিয়ে কেবল হতাশা লক্ষ্য করা যায়।
"কমলাকান্তের দপ্তর" গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধ হচ্চে "পতঙ্গ"। এ প্রবন্ধটি অত্যান্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং উপভোগ্য। এখানেও সাংসার বিষয়ক বিষয়বস্তু আলোচিত হয়েছে। লেখক প্রবন্ধ টি শুরু করেছেন "পতঙ্গ" দিয়ে অপূর্ব ভঙিতে। লেখকের মতে মানুষ পতঙ্গের মতই। তাদের প্রত্যেকেরই মরার অধিকার আছে। কেউ মরে কেউ কাচে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে। তার ভাষায় " সকলেরই এক একটা বহ্নি আছে, সকলেই সেই বহ্নিতে পুড়ে মরতে চায়। সে ভাবে তার সেই বহ্নিতে পুড়ে মরার অধিকার আছে। কেউ মরতে পারে, কেউ কাচে বাঁধা পায়। জ্ঞান বহ্নি, ধন বহ্নি, মান বহ্নি, রুপ বহ্নি, ধর্ম বহ্নি, ধর্মীয় বহ্নি, সংসার বহ্নিময়। আবার সংসার কাচময়। লেখকের মতে কাচ না থাকলে একদিন আমরা সবাই পুড়ে মরতাম। প্রত্যেক মানুষেরই কোন না কোন আবেগ রয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে মানুষ সে দিকে এগিয়ে যায় তাতে মৃত্যু হলেও কোন আপত্তি নেই। লেখকের মতে সংসারের মায়া মমতা হচ্ছে ঐ কাচ। যার জন্য মানুষ নিজের বৈশিষ্ট্য থেকে অনেক কষ্টে বিরত থেকে সংসারে বেঁচে থাকে।
"কমলাকান্তের দপ্তর" গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধেই প্রবন্ধকার অত্যান্ত সুন্দরভাবে মানুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরেছেন এবং দিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন - "আমার মন" প্রবন্ধে পরোপকারের কথা বলেছেন। "চন্দ্রালোক" প্রবন্ধে ইংরেজদের নিন্দা করেছেন। "স্ত্রীলোকের রুপ" প্রবন্ধে লেখক স্ত্রী লোকদের বাহ্যিক রুপের চেয়ে তাদের গুণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। "বড় বাজার" প্রবন্ধে লেখক মানুষের স্বার্থপরতা ও ঠগবাজির চিত্র তুলে ধরেছেন। "বিড়াল প্রবন্ধে তিনি ধনি- দরিদ্রের বৈষম্য তুলে ধরেছেন। "ঢেঁকি" প্রবন্ধে সমাজের শোাষক ও অত্যাচারীদের ঢেঁকির সাথে তুলনা করে তাদের স্বরুপ উন্মোচন করেছেন।
পাঠ পর্যালোচনাঃ "কমলাকান্তের দপ্তর" গ্রন্থের গ্রন্থ গুলো পাঠ করে বুঝতে পারছি এ প্রবন্ধগুলো বঙ্ক��মচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শুধু মানসদ্বন্ধের বহিঃপ্রকাশ নয়, এতে উপস্থাপিত হয়েছে তৎকালিন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর নিম্ন ও স্বার্থপর আচরনের চিত্র। কমলাকান্ত তো সে স্বয়ং নিজে। তৎকালীন, রাজনৈতিক, কূটকৌশল, শিক্ষা ব্যবস্থার করুন চিত্র ধনাঢ্য জমিদারদের শোষনের মানসিকতা লেখকের মনে চাপা ক্ষোভ ও বেদনার সৃষ্টি করেছিল। এ সকল ক্ষোভ থেকেই সৃষ্টি কমলাকান্তের দপ্তর।
মোট কথা এ গ্রন্থ পর্যা���োচনা করলে দেখা যায় একজন উপন্যাসিক এতো শক্তিধর প্রবন্ধকার হতে পারে তা অবিশ্বাস্য। গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সুদক্ষ ওবং সুললিত বর্ননা উপমা উপমা, অলংকারের প্রয়োগ এবং ভাষা ও শব্দ প্রয়োগের দক্ষতা মনে করে দেয় বঙ্কিম চন্দ্রের কমলাকান্তের দপ্তর বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ।
হ্যাপি রিডিং ♥♥♥
পৃথিবী হোক বইময় ♥♥♥ -
লেখকের যত রাগ,ক্ষোভ,বেদনা,চিন্তা,রহস্যপ্রিয়তা সব সে এক পাগল নেশাখোর কমলাকান্তর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, যা তিনি সরাসরি বলতে সংকোচ বোধ করেন।কে গায় ওই প্রবন্ধে কমলাকান্ত মানুষের সাংসারিক জীবনের আবহ নিয়ে আলোচনা করেছেন।"পতংগ" আর "মনুষ্য ফল" প্রবন্ধে কমলাকান্ত ধারনা করে, মানুষ মাত্র পতঙ্গ আর ফল।"চন্দ্রালোকে"প্রবন্ধে চাঁদকে তিনি তার সাথে বাসর করতে অনুরোধ করেন। "বসন্তের কোকিল" প্রবন্ধে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছেন,মানুষ সব বসন্তের কোকিল। সুসময়ে শুধু তার কু ধ্বনি পাওয়া যায়। অসময়ে তার টিকি টাও খুজে পাওয়া যায় না।"স্ত্রীলোকের রুপ"প্রবন্ধে নারী কে শ্রেষ্ঠ করেছেন, রূপে নয় মহত্বের গুনে।" বিড়াল" গল্পেও সমাজের অসংগতি ধরা পড়েছে। তার মতে, ‘অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য কেউ পৃথিবীতে আসে নি।"ঢেঁকি" প্রবন্ধে সমাজের শোাষক ও অত্যাচারীদের ঢেঁকির সাথে তুলনা করে তাদের স্বরুপ উন্মোচন করেছেন।সর্বোপরি, বঙ্কিমের সেরা লেখা, যেটা লেখক নিজেও স্বীকার করে গেছেন।
-
কলেজে থাকতে বাংলা প্রথম পত্রে 'বিড়াল' নামক গল্পটি পড়ার পর 'কমলাকান্তের দপ্তর' বইটি পড়ার জন্য কয়েকবছর অপেক্ষা করতে হল।
বেশ কতগুলো গল্প নিয়ে বইটি সাজানো। নসিরাম বাবুর কাছ হতে আফিম, আর প্রসন্ন গোয়ালিনীর দুধই ছিল তার নিত্যনৈমত্যিক আহার। প্রায় সব গল্পই নেশার ঘোরে লেখা।
কখনও দিব্যকর্ণ প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন প্রাণীর (মৌমাছি, বিড়াল..) সাথে কথা বলতো। সমাজের বিভিন্ন অন্যায়, অথ্যাচার, রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা, সংস্কৃতি ইত্যাদি প্রায়ই হাস্যরসের ম��্য দিয়ে ব্যাঙ্গার্থভাবে ফুটিয়ে তুলেন।
আবার, বিভিন্ন জিজ্ঞাসা কিংবা মাথায় ঘুরতে থাকা চিন্তাভাবনার উত্তরও নেশায় মত্ত থাকা কমলাকান্তের ভাষায় জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন।
'মনুষ্য ফল, বিড়াল, বাঙালির মনুষ্যত্ব, বুড়ো বয়সের কথা, কমলাকান্তের জবানবন্দি' উল্লেখযোগ্য। -
বঙ্কিমের একটি লেখা যদি পড়তে হয় তবে নিঃসন্দেহে এটি পড়া উচিত।
রাজর্ষি বঙ্কিম তাঁর জীবনদর্শনের ভঙ্গিমা অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখাটিতে। সাধু ভাষায় লেখা এই রচনাসমূহ উঁচুদরের প্রতিশব্দবহুল হলেও সেই শব্দগুলোই এই রচনাকে উচ্চাসনে উপবিষ্ট করেছে।
বর্তমানে স্যাটায়ার বলতে যা বোঝায় এটি তাই.. তবে উঁচুদরের স্যাটায়ার। ছোট ছোট ভাবনার মধ্যে অনেক বিশাল কিন্তু দরকারি বিষয়গুলোর প্রতি ভাবতে বাধ্য করেছে বইটি।
৫***** -
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনিশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান
কমলাকান্তের দপ্তর বইটি খুবই সুন্দর কমলাকান্ত চরিত্রটি ও বেশ অসাধারণ। -
কমলাকান্ত আফিম খেয়ে উন্মাদ হইলেও অনেক যৌক্তিক কথাবার্তা বলিত৷